বব ডিলান ও বর্তমান বঙ্গসমাজ

Joan Baez and Bob Dylan

Joan Baez and Bob Dylan – P.C – Rowland Scherman, National Archives and Records Administration

ওনার নাম কি বব ডিলান না বব ডিল্লো? সে যাই বলুক, তারা আনন্দ থাকুক। পৃথিবীতে কোথায় বিতর্ক নেই বলুন তো? শালা বিতর্ক সব জায়গায় আছে, হোমেও আছে যজ্ঞেও আছে। তাই খুব স্বাভাবিক ভাবে অতি প্রগতিশীল সেই জাতি, যারা মিসেল ফুঁকোর সাথে ফুটবল খেলে বড় হয়েছে, তাদের মধ্যে এ নিয়ে আলোচনাটা স্বাভাবিক নয়? সে তো হবেই। সেটাই খুব স্বাভাবিক। ইদানীং, ক’দিন যাবৎ বব ডিলান, যে আপামর বাঙ্গালির কাছে আজ ববদা বলে পরিচিত, তাকে নিয়ে আলোচনা তুঙ্গে। আর দুর্গাপুজো হল পুঙ্গে। বব ডিলান এর ববদা হয়ে ওঠার গপ্পো নিয়ে আজ আমি…………………

প্রথমে আপনাদের জানা উচিৎ আমি বব ভাই কে কতদিন চিনি বা ওনার সম্পর্কে আদৌ কি কিছু জানি? আসলে ঝাট জ্বললো তাই লিখতে বসলাম। একজন ফোন করে জিজ্ঞাসা করল, শুনেছেন, বব নোবেল পেয়েছে? বললাম হ্যাঁ। কি কাণ্ড ! তাহলে রবীন্দ্রনাথ আর ডিলান সেম? তাহলে এখন থেকে সাহিত্য শুনতে হবে, পড়তে হবে না? জিজ্ঞাসা করলাম আপনি কি ওনার গান শুনেছেন? উত্তরে সুমন চ্যাটুজ্যে, থুড়ি, কবির সুমনের দুটি অনুবাদ করা বব ডিলানের গানের কথা বলল। সে কি? বলতে বাধ্য হলাম, আমি দাদা পাগলু ২ এর গান শুনি আমাকে এসব কেন বলছেন?
এছাড়াও, আরও কিছু “ইন্টালেকচুয়াল” ফোন পেয়েছি। যে ফোনে, উডি গাথ্রি থেকে শুরু, বব ডিলান এর বিছানায় জন বেজের ন্যাকামো হয়ে পিট সিগারকে হাথে গিটার দিয়ে মিতা মণ্ডলের হত্যা রহস্যতে শেষ হয়েছে। কে এই বব ডিলান? শুনলাম বা জানলাম এমন একজনের থেকে যিনি আশির দশকের মাঝামাঝি দিক থেকে বব ডিলান কে জানতে শুরু করেছেন। তার কথা গুলো খানিকটা তুলে দিলাম এখানে।

“ওরা আমাদের গান গাইতে দেয়না
নিগ্রো ভাই আমার পল রবসন
আমরা আমাদের গান গাই ওরা চায়না।।
আমাদের কুচকাওয়াজে ভয় পেয়েছে রবসন
ওরা বিপ্লবের ডাঙ্গরুতে ভয় পেয়েছে রবসন।।”

হেমাঙ্গ বিশ্বাসের এই গানটি সে শোনে তার মায়ের কাছে, বদলে যায় সদ্য যৌবনে পা দেওয়া সেই মানুষটির চিন্তা ভাবনা। গভীর ক্ষত তৈরি হয় তার মনে। আস্তেআস্তে তার পরিচয় হয় “ইন্টারন্যাশনাল”, “আমরা করবো জয়” ইত্যাদি গানের সাথে। সময়টা বিষণ্ণ, সময়টা রক্তক্ষরণের, সময়টা আলুথালু, সময়টা উদাস। দ্রুত বদলাতে থাকে ভেতরের নিউক্লিয়াস, বদলাতে থাকে গানের ভাষা, গানের অর্থ। হেমাঙ্গ বিশ্বাসের হাত ধরে কি ভাবে উডি গাথ্রি, পিট সিগার, বব ডিলান, ক্রিস্টি মুর, মার্ক নপ্‌ফলার আরও অনেকে এসে তার জীবনে ভিড় জমাল তা সে আর মনে করতে পারেনা। সে নাকি ! সেই সময়ই বিপ্লব নামক এক আপাতবিরোধী ফলের স্বাদ পায়। এই নাম গুলো ক্রমে তার কাছে বিপ্লবের প্রতিচ্ছবি হয়ে ওঠে। সবাই যেন তার পরম আত্মীয়, বন্ধু। আসলে তার অব্যক্ত কথা গুলি তাদের গানের মধ্যে দিয়ে সত্য নামক এক বিচিত্র খেলায় মত্ত। নব্বই দশকের শুরুর দিকে সুমনের গান বদলে দিল সব কিছু। সুমনের হাত ধরে বব ডিলান এলিট্‌ ক্লাস থেকে নেমে এলো সাধারন বাঙ্গালির ড্রয়িংরুমে, সরি বসার ঘরে। সেই বব ডিলানের আবির্ভাব বাংলার আকাশে। কিছু বছরের মধ্যেই সে বুঝতে পারল বিপ্লবের আসল মানে। সবাই তখন ঠাণ্ডা ঘরে বসে মানুষের কথা বলে, গান লেখে, কবিতা লেখে। সত্তরের দশক থেকেই ডিলানের গান ও ব্যাক্তি ডিলান পরস্পর বিরোধী। তাহলে, ডিলানের গানের কথা আর ব্যাক্তি ডিলান আলাদা? নাড়া দেয় তাকে। কেন ডিলান আর প্রতিবাদী কণ্ঠ নেই তার কাছে? বিরোধ দেখা দেয় তার মনে, ব্যাক্তি ডিলান ও ডিলানের সৃষ্টির মধ্যে। সদ্য পা রাখা বেকারত্বে, সে বুঝল ডিলান অনেক আগেই ঠাণ্ডা ঘরে, বারান্দায় রোদ্দুর আমি আরাম কেদারায়। আমি কত কিছু শুনলাম ওনার থেকে, ভারতীয় ফোক্‌ ও ওয়েস্টার্ন ফোক্‌ এর মধ্যে পার্থক্য। এতো পার্থক্য থাকা সত্বেও, তাও কি ভাবে বব ডিলান একজন ওয়েস্টার্ন ফোক্‌ (রক) গাইয়ে হয়েও ঢুকে পরলেন আমাদের ঘরে।

অবশ্য আমার কাছে নভেল আর নোবেল এর খুব একটা পার্থক্য নেই। রবিঠাকুরের নোবেল চুরি হবার পর বুঝেছিলাম চোরবাজারেও এর বেশ দাম আছে। আগেতো সব একইরকম লাগতো। আমি ওনাকে বললাম, এখনতো অনেক বিদেশী লেখক অডিওবুক প্রকাশ করছেন এবং সেগুল বেশ জনপ্রিয়ও হচ্ছে। তাহলে, ডিলানের গানকে সাহিত্য বলে মানতে এতো কেন অসুবিধা? স্বয়ং, রবিঠাকুর বলেছেন, “গান এল………কথা আর সুর এলো গলাগলি করে”। কে এলো জানি না, কিন্তু যে ডিএস এর পাইট নিয়ে এলো ১২০ টাকায় নুন লঙ্কা দিয়ে মারবে বলে, সেও বলছে ব্যাপারটা ঠিক হচ্ছেনা। পাশের বাড়ির বৌদি বলছে ববদার গান নাকি হেব্বি ! চঞ্চলদা নাকি ছেলেবেলা থেকে শুধু ডিলান ছাড়া আর কিচ্ছু শুনতে ভালবাসেনা। “একলা ঘর আমার দেশ” কি লিখেছে [বাঁড়া] রুপম, পরের বার ওর পাওয়া উচিৎ। দেবেনা শালারা, বাঙালি বলে। যদি রুপমের নাম রুপম না হয়ে জনাথন টনাথন হতো, এই বছরেই (চুল [হিন্দিতে চুলকে নাকি বাল বলে]) নোবেল পেয়ে যেত। ওর কোন এক দিদি বলেছে আমেরিকা নাকি ঝালেও আছে ঝোলেও আছে অম্বলেও আছে। ভারতের সাথেও আছে চিনের পোদে কাঠি দেবে বলে, আর কিস্থান যেন? তাকেও টাকা দেয় চিন থেকে বোমা কেনার জন্য। তা নাহলে নাকি ওদের শান্তি নেই। সব ওদের পলিটিক্স !! এদেশ ওদেশ এ লাগিয়ে দাও, এর বাড়ি ওর বাড়ি বোমা মার (“বললললছি, বোমা মারুন” টাইপের আরকি)। এই সব বিটলামি করেও নাকি কেলেমানিক নোবেল শান্তি পুরুস্কার পায়। তাই নোবেল নয়, গুরু ডিলান যদি “বঙ্গভিভুশন” পেত, তাহলে বুঝতাম।

বাস থেকে নেমে আসা দুই ফর্সা বাঙালি, ডিলান কিন্তু বহু মেয়ের লাইফ নিয়ে খেলেছে। লেখে ভাল, সেই হিসাবে গুলজার কেই দিতে পারতো। (সে কি কাকু?)
এরপর, মেট্রোতে শুনলাম, একদিন অমিতাভও পাবে আক্টিং এর জন্য। (দাদা ২ টো ইনো দেবেন, কত হল?)
যেটা শোনার পর আমার দুটো, কপালে ফুটবল খেলেছিল, সেটা না বলে পারছি না। যার নামে ৪০০-৫০০ বছর বাদে নাকি মন্দির হবে…………সেসসসওওওও নাকি……………।।

 

 

স্বত্ব © বংব্লগার আপনার যদি মনে হয় বা ইচ্ছা হয় তাহলে আপনি এই লেখাটি শেয়ার করতে পারেন কিন্তু দয়াকরে এর লেখকের নাম ইন্দ্রজিৎ দাস উল্লেখ করতে ভুলবেন না। ভুলে যাবেননা চৌর্যবৃত্তি মহাদায়, যদি পড়েন ধরা।

যদি আপনি আপনার নিজের ছবি এখানে দেখতে পান এবং তাতে যদি আপনার কোন রকম আপত্তি থাকে তাহলে অবশ্যই ই-মেল করে আপনি উপযুক্ত প্রমাণসহ আপনার দাবি জানাতে পারেন।দাবিটি ন্যায্য প্রমাণিত হলে, সে ক্ষেত্রে ছবিটি সরিয়ে ফেলা হবে।

বং ব্লগার

"বং ব্লগার" একজন আস্ত পাগল, অশিক্ষিত, জ্ঞানগম্য হীন ট্রাভেলার। পথের সম্বল সামান্য পুঁজি যা মাঝে মাঝে জোটেও না, আর মনে অজানাকে জানার ও দেখার তীব্র আকাঙ্ক্ষা। হয়ত, সবটাই ভোরের স্বপ্ন, তাতে কি যায় আসে? হয়তো সবটাই কাল্পনিক, তাতেও কি কিছু যায় আসে? সবটা মিলিয়েই আমি চিৎকার করে বলতে চাই, আমি "বং ব্লগার"।

You may also like...

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

two + ten =

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.