Category: গল্প হলেও সত্যি

কি ভাবে বোঝাই ভ্যান গখ্‌, ভ্যান চালক নন, আইজেনস্টাইন বিজ্ঞানী নন, আমি ক্রমশ অর্গানাইসড রিলিজন থেকে বিশ্বাস হারাচ্ছি, কেন? উত্তর খুঁজছি আমি আসলে। এ বোঝানো সম্ভব নয় ওকে। সব শুনে বলেছিল ‘আমি এতো জানি না তোমার মতো, আমাকে শিখিয়ে দাও, দেখো আমি পারবো, যা বলবে আমি পড়ব, তোমার মনের মতো হবার জন্য, আমাকে ফেলে দিয়ো না, আমি যে বাঁচবো না তোকে ছাড়া অর্জুনদা’।  আমার খারাপ লেগেছিল কিন্তু কিছু করারও ছিল না।

জিজ্ঞাসা করলাম চিনতে পারছো? উত্তর এলো ‘না, একটু আলোতে এসে দাঁড়ান আজকাল চোখে বড্ড সমস্যা হচ্ছে’। তাও চিনতে পারলো না। নিজের পরিচয় দিলাম ‘আমি অর্জুন’। সাথে সাথে জ্বলে উঠল ওর মুখ, আর মুহূর্তের মধ্যে ফ্যাকাসেও হয়ে গেল। শান্ত গলায় বলল ‘কেমন আছ? ভাল চাকরি করো শুনেছি, লেখালেখি করো আগের মতো? পৈতৃক সূত্রে যা সম্পত্তি পেয়েছে তা দান করেছে পার্টিকে। বাসে ওঠার আগে বলে গেল ‘উত্তর কলকাতার গায় গায় লাগান বাড়ির সরু গলিতে চড়া রোদের সন্ধ্যে নামলে আজও অর্জুন দেখা দেয়, ভাল থেকো আর পারলে ঐ ম্যঁ ব্লা কলমটা এখনও থাকলে ওটির সঠিক ব্যাবহার করো’।

একটা কথা বলত জুন “বিলীন থিওরি”। তখন, আমার আকাশে বাতাসে ভ্যান গগ্‌, ভ্যান গগের কাঁটা কান থেকে স্যালভাডোর ডালির সুরিয়াল ছবি হয়ে ফ্রিদার কোলে দোল খাচ্ছে। তখন যেন আমি নিজেই একজন আঁকিয়ে। লম্বা পাঞ্জাবি, কাঁধে ঝোলা ব্যাগ আর পায়ে কোলাপুরি চটি আর হাতে সিগারেট। একদম, শেষের কবিতার অমিত রায়। অবশ্য, বলতে দ্বিধা নেই, আদবে আমি তখন মাথা থেকে পা পর্যন্ত অমিত রায়কে টুকছি। শুধু মনে আসত জুন কি কেটি?

কি দরকার? বলল দুটি জিনিস সে চায়, পেলেই সে চলে যাবে। প্রথমে এ কথা শুনে আমি একটু ঘাবড়েই গেছিলাম। ওর চাওয়া গুলো অদ্ভুত হতো কিনা, তাই ঘাবড়ে গেছিলাম। সেদিনের চাওয়া, তার সাথে খানিকটা পথ হাঁটা আর এক মুঠো বর্ষা। সেদিন অনেকটা পথ হেঁটেছিলাম ওর সাথে। আর একটা কথা বলেছিল ‘এক মুঠো বর্ষা চেয়েছিলাম তোমার কাছে, এটাই পুঁজি, বিদায়’।

আজ দোলের দিনে বড্ড মনে পড়ছে কোন এক ফেলে আসা দোলের দিনের কথা। কেন জানি না, প্রতি বছর বসন্তের হাওয়া আর ঝরা পাতা বড্ড উদাস করে দেয় আমাকে।  আজও বারবার মনে হয় সময় কেন থেমে গেলে না সেদিনর ফেলে আসা দোলের সকালে।

নবীন চন্দ্রের মিষ্টির দোকানের সামনে থেকে একটা বাস ঝড়ের বেগে এসে মোড় নিলো, কিন্তু ব্রেক মারতে মারতে একটু দেরি করে ফেলেছিল বাসটা। ধুপ করে একটা শব্দ হল। আর তার সাথে ‘আ..আ…’ এক আর্তনাদ। ছুটে গেলাম সামনে, তীব্র গতিতে বেড়িয়ে গেলো বাসটা চোখের সামনে দিয়ে। খানিক দুরে

তখন আমি নিজেকে অরণ্যদেব আর দাদাকে জঘন্যদেব ভাবছি। তাই অরণ্যদেবের মতো ‘অউ্‌ রেভ্যয়’ বলে বিদায় দিলাম প্রেমকে। এতো কষ্ট হচ্ছিলো এই ভেবে যে ওর নামটাও জানা হলনা। বুকে মোটামুটি দু চার পিস্‌ পাথর চাপা দিয়ে এসে উঠলাম হোটেলে। খানিকবাদে ফ্রেশ হয়ে খেয়ে নিয়ে, লক্ষ্য করলাম ঘরে একটা বারান্দা আছে। গিয়ে দাঁড়ালাম। মনেহল ডান পাশে গোলাপি ছায়া। তাকিয়ে দেখি অবাক কাণ্ড।

বছর দুয়েক আগে অর্জুনদা খবর পেয়েছিল পিঙ্কির বর হঠাৎ স্ট্রোকে মারা যায়, মাত্র ৪৩ বছর বয়সে। খানিক ক্ষণের নিস্তব্ধতা,  অবাক হওয়া পেরিয়ে অর্জুনদার চৈতন্য ফিরতেই, দেখলো সামান্য হলেও রাগ ছিল যার ওপর, মুহূর্তের মধ্যে সে রাগ দুঃখে পরিবর্তিত। আসলে, আজ অর্জুনদা নিজেও তো ক্লাস নাইনে পড়া মেয়ের বাবা। তাই বুঝতে পারলো ক্লাস টেনে পড়া ছেলেকে নিয়ে সে কতটা সমস্যায় পরেছে।