বাঙালীর ফটোগ্রাফিচর্চার পথিকৃৎ – তোমারে সেলাম
আমাকে আজও ভাবায় সুকুমার রায়
বঙ্গ জীবনের নতুন অঙ্গ “ওয়াক”। আপনার কি মেদ বহুল বডি? সুগার আছে? সব ভক্ষণ এসে জুটছে কি আপনার পশ্চাৎ দেশে? বাড়িতে একখান ক্যামেরা আছে? কি বলছেন? হ্যাঁ!!!!! ব্যাস্ সব সমস্যার সমাধান হয়ে গেছে। ৫০০ বা ১০০০ রের লোট থাকলে চোলবেক লাই বাবু। বেড়িয়ে পড়ুন শুধু, কোথায় যাচ্ছেন জানার প্রয়োজন নেই। হাঁটুন শুধু হাঁটুন। মুশকিল টা হল কোথায় জানেন? যেদিন থেকে বঙ্গ প্রেমিরা (থুড়ি এই বঙ্গ বলার পেছনে কোন রাজনৈতিক ষড়যন্ত্র খুঁজবেন না প্লিস্) হাগাকে পটিতে আর সুগার কে শুগা্-তে পরিণত করলো। তুলুন ছবি ইচ্ছা মতন, আর ছবি দিয়ে ছড়িয়ে মুতুন ফেসবুকের দেওয়ালে। টপাটপ, টোপাকুলের মতন ফুলে যাবে আপনার পপুলারিটি, যাকে দেখে লুচিও পাবে লজ্জ্বা। কচি পুরুষদের জন্য বলছি, আজকাল ভাল মালও পাওয়া যায় এই সব ওয়াকে। যদি আপনি বিবাহিত হন কিন্তু দেখতে কচি, তাহলে পোয়াবারো (সাবধান বানী – ঘর সামলে, বৌ যেন ফেসবুকে না থাকে)। যদি আপনি বুড্ডহা্ নামে পাড়ায় খ্যাত হন অথচ অবিবাহিত, ভাল খবর, আজকাল বউদিরাও ছবি তুলছে।
এসব দেখে কি আপনারও ইচ্ছা করছে শনি বা রবিবারের সকালে এক দঙ্গল লোক নিয়ে কলকাতার রাস্তায় দাপিয়ে বেড়াতে? একদম মাথায় হাত দিয়ে বসার কিছু হয়নি। খুলে ফেলুন একটা পাতা, হ্যাঁ, ঠিকই শুনেছেন, পাতা রে বাবু পাতা। যেখানে সেখানে নয়রে বাপু, ফেসবুকে (আমিও কিন্তু প্ল্যান করছি, তাই তাড়াতাড়ি করুন)। ব্যাস, কেল্লা ফতেহ্।
এবার জেনে নেওয়া যাক, কি ছবি তুলবেন? এখানে একটি ছবি স্যাম্পল হিসাবে দিলাম, যে ছবি কোন এক আদিম যুগে ১.৬ কে লাইক্ নিয়ে সসন্মানে মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে ছিল ফেসবুকের পাঁচিলে।
কি কি দেখতে পারেন বা কি কি রকমের ওয়াক করতে পারেন এবং তার ফলে কি হতে পারে। নিজের বুকের রক্ত দিয়ে বোঝা কিছু ছবি উপহার দিলাম আপনাদের। খাবি কি ঝাঁঝেই মরে যাবি না। আমি বলছি, আমি, স্বয়ং আমি (তুই কে রে বে?)। সুতরাং, যত দোষ নন্দ, ভাবছেন তো? আজও নন্দদার পদবি ঘোষই।
ছবি ১ – চলমান বর্তমান
এই যে আপনারা এয়েছেন, কোত্থেকে? (এমন ভাব, এসে গেছে সকাল সকাল ছিঁড়তে) কি করবেন এই সব তুলে? পেপারে দেবেন নাকি?
বাঁড়া আবার এক দঙ্গল চলে এসেছে রে ভাই! পুরো ব্যাবশার (ব্যাবসা) পোয়া মেরে দেবে ঘণ্টা খানেক। পেত্তেক রোববার এরা বাঁ….আআ চলে আসে। কি যে করে? বড়োলোক বাপের মাল কয়েকটা কাঁটাছাঁটা পরা মাগি নিয়ে বেড়িয়ে পড়লো ফুর্তি মারাতে। (যা, এ আবার কি?)
দাদা কেমন ইনকাম হয়? আমার ছেলেটাকেও কিনে দিলাম একটা। আপনার হাতে যেটা আছে তার থেকেও বড় ক্যামেরা (জ্বলে যাচ্ছে, কিন্তু মুখে হাসি)। ছবিটা হেব্বি তোলে আমার ছেলে। সেদিনতো বারান্দার ফুটো দিয়ে ঐ বাড়ির মেয়েটার একটা ছবি নিয়েছে। ওহহহ্ আপনি ভাবতেও পারবেন না (তাহলে বলছিস কেন আমায় শালা)।
দাদা আপনারা কি পুরটাই কম্পিউটারে করেন? (মানে?) লেখালেখি, ছবিতোলা। আজকাল যা সব হয়েছে আরকি। ইজি হয়ে গেছে আজকাল এসব, আমাদের টাইমে কি ছিল ভাবতেও পারবেন না। রলিফ্লেক্স ক্যামেরা, ও অন্য জিনিস (দাদা ওরা এগিয়ে গেছে, পরে একদিন হবে)। যান যান, ওই করুন আপনারা।
কি মডেল? বহু পুরনো আপনারটা, দেখছি। ডি ৭৫০ কি বলছেন? (ডি ৭৫০ কথা বলে নাকি?) পারফর্মেন্স কেমন? দাম কমলো? (দাঁত ক্যালানে, আমি ছবি তুলতে বেরিয়েছি, তোকে ইনফর্মেশন দিতে নয়।)
আপনাদের টিমে কয়জন? সবাই একসাথে বেড়িয়ে পরেন? কবে কবে তোলেন? কি সাবজেক্টের ওপর কাজ করছেন? (তোকে বলবো কেন?) আসলে এক সময় আমিও !! (থাক আর মুখ খুলিস না, আমি বুঝে গেছি) বহু এসব করেছি। এখন, সংসার বুঝলেন, সংসার। বিয়ে থা করেছেন? (দাদা ছাড়ুন, এবারতো কন-কা-ডোম এ চলে আসবেন দেখছি)
কোন চ্যানেল? নিন নিন ছবি নিন ভাল করে। বিল্ডিঙের ছবি নিচ্ছেন তো? আসুন আপনাকে দেখাচ্ছি একটা জিনিস, তুলে নিন কাজে দেবে আপনার। “ইল্লিগাল” হচ্ছে পুরো কেস্টা। শিবুর মাকে এক পয়সা দেয়নি এখনও প্রমোটার। কথা বলবেন? বসিয়ে দিতে পারি। (ভাই, যাবি)। দাদা কোন কাজ হলে বলবেন। এখানে এসে কেলো পার্থ বলবেন, এক ডাকে চেনে আমায় সস্স্স্ব্বাই।
দাদা আপনি এদিকে একা একা তুলছেন? ওদিকে যান, এক দল ছেলে মেয়ে ছবি তুলছে আমাদের পাড়ায়। এই ভাঙ্গা বাড়ির ছবি নিয়ে কি হবে? আপনি কি ওদের সাথে আছেন? (না রে ঘাটের মড়া, আমি একাই ভাল আছি)।
ছবি ২ – চলমান ফ্যাশানেবল্ বর্তমান
দারুন একটা কনসেপ্ট, এটা। কবর থেকে ক্যাবারে। (মানে?) পুরনো কলকাতার ক্যাবারে ড্যান্সার যারা ছিল তাদের কবরে কবরে খোঁজা হবে। (তাহলে ক্যাবারে থেকে কবর হলে ভাল হতো)। ওটাই তো ভাই। (কলকাতার ক্যাবারে ড্যান্সাররা কি সবাই? জানিনা ভাই এত ইতিহাস)
কাল সকালেরটা দেখেছিস? মানিকতলার মোড় থেকে শুরু নীল নদের ধারে শেষ। (কি বলছিস? হাঁটতে হাঁটতে নীল নদ অবধি কি করে যাবো?) ওটাই তো ফান্ডা গুরু, এই ওয়াকের। (মানে, পৃথিবী হারিয়ে গেছে মরু সাহারায়, মিশরের নীল নদ আকাশে মেলায়)। দুর, নীল নদ কি করে সাহারায় আসবে? (ঠিক তেমন ভাবে, যেমন ভাবে…………)
হ্যালো!! বাবা, আজকাল ফোনও ধরোনা আমার। (নানা ঐ আরকি, বল)। একটা ওয়াক আছে, একজন টপ ব্লগারের। বড়দিনের কেক তৈরি হবে মানে মিক্সিং আছে অ্যান্ড মাইক্রোতেও করে দেখাবে। (ভাই মাইক্রোওভেনতো বিশাল ভারি, নিয়ে হাঁটবো কি করে?)।
বাবলাদা অল শোলে ডে আছে, যাবে নাকি ছবি তুলতে? আমি ৫-ডি টা নিয়ে যাচ্ছি। (ওটাতো অল সউলস্ ডে রে!!!!)। একই ব্যাপার বস্। ঐ অন্ধকার হলে কবরে কবরে মোমবাতি দেবে, আরকি। তুমি শালা বাড়িতেই বসে থাকো, কলকাতার সব বড় বড় ফটোগ্রাফাররা যাবে কবরখানায়। বাআআ…(ল), তুমি যেতে পারবেনা? খ্রিস্টানদের ভূত প্রেত পুজো, এ শ্লাআআ দেখার মতন জিনিস। বলে দিলাম পরে আর দেখতে পাবেনা।
দাদা ১৫০০ টাকায় ভুতের দর্শন, আমি যাচ্ছি কাল রাতে, তুমি যাবে তো চলো। আগের বারেরটায় সব্বাই হেব্বি ভয় পেয়েছিল। সেন্ট্ জোন্সের ঘণ্টা বাজতেই ( সেন্ট্ জোন্সেরও কি আমাদের মতো ঘণ্টা ঝোলে?) সব্বাইয়ের ফেটে গেছিলো। (শুধু শুধু নিজেরটা ফাটাবার জন্য ১৫০০ দেবো? কেনরে ভাই)
বস্ পুজোতে কি করছো? অষ্টমীতে যাবে? (কোথায়?) “পুজার চোখে কলকাতার পুজো”, একটা দারুন ওয়াক হচ্ছে। (হাফপ্যান্ট্ পরা ন্যাকা পুজা কি? বাপরে!!!) কেন কি হল? ওর পুজো নিয়ে দারুন কনসেপ্ট, তাইতো ওকে দিয়ে করাচ্ছে এই ওয়াকটা। (সে কি? কলাবৌ কবে স্নান করায় এটা কয়েকদিন আগেই অমিতদাকে জিজ্ঞাসা করছিল)। তুমি কি কলাবৌ ধুয়ে জল খাবে, না অমুক পুজোয় ইজি ঢুকতে পারবে, ফয়দা নেবে। যাবে কিনা বল? ( অমুক দিদির চোখে দুর্গা পুজো – দেখবো কেন? আমারও তো দুটো গোল গোল আছে)।
এবাররেরটায় না বলতে পারবে না। জীবন্ত জলাভূমি ওয়াক বস্, জীবন্ত জলাভূমি, কোন কথা হবেনা।(সত্যিই, কথা হতে পারে কি?) কলকাতার জলাভূমি, উফফফফ্, কিছু কনসেপ্ট। জাস্ট ফাটাফাটি। ভাল, বলছি চলো এবার, শুধু পুকুর আর পুকুর দেখবে। (জলাভুমি কি শুধু পুকুর রে ভাই?)
কলকাতার এক বিখ্যাত “সাহিত্যে সুরসুরি” ওয়াক। এটাতে যারা আসছে নাম শুনলে বিচি কপালে। তোমাকে ডেকেছে তোমার বাপের ভাগ্য ভাল, তাও বাআআআ……(ল) তুমি যাবেনা। (যারা এক সময় হেরিটেজ ধ্বংস করেছে তাদের এসব মানায়? ফেলাসি) ফেলাসি টা কি? পলাসির ভাই কি ফেলাসি? আগেতো যেতে তুমি, এখন কি হল? ইগো? কিগো ইগো? মনে রেখো, ৩৪ এ ওরা আউট হবে ভাবতে পারেনি। (ওয়াকে না যাবার সাথে, “মাস্টারমশাই আপনি কিন্তু কিছুই দেখেননি”-র, কি সম্পর্ক?)
আমার ঘরের অন্দর মহল – রাত ২ টো, বিছানা
অন্দর মহল? (হাসালাম আরকি, ওটা শোবার ঘর হবে)। ছবি তুলতে যাচ্ছ যাও, এসব আবার কি? (কোন সব?) ওই ফর্সা মেয়েটার সাথে এত কথা কিসের? (মানে? কোন ফর্সা মেয়েটা?)। ওলে বাবা! এটাও কি শিখিয়ে দিয়েছে? (মনে মনে !! দুর বাঁড়া স্পষ্ট করে বলনা, কি হয়েছে?)। যে মেয়েটার সাথে সারা ওয়াকে চিপকে ছিলে। (ও মা, জাস্ট একটু কথা বলেছি)। তাহলে এত গুলো ছবি এলো কি করে? (কোথায় দেখলে?) শুধু এই রবিবারের ওয়াকের কথা বলছিনা। ভালকরে ফেসবুক চেক্ করলাম, দেখলাম লাস্ট ৩ মাসে যতগুলো ওয়াক হয়েছে ওই শুঁটকি অদ্ভুত ভাবে তোমার পাশে। (লে পাগলা!!!! চিন্তেই পারছিনা তাকে, যার জন্য আমার ঘর ভাঙছে)। কোন উত্তর আছে? থাকবে কোত্থেকে, পাপ বাপকেও ছাড়েনা। (আমার মনে হচ্ছে………ক্রাইম পেট্রোল, সিআইডি এসব গিলে হচ্ছে)। কি? তোমার পেছনে কেউ ষড়যন্ত্র করছে? নিজেকে এত বড়, কি, লেখক না ফুটোগ্রাফার ভাবো? (ব্যাসিকিয়ালি, লোম ভাবি, তা না হলে এ দিন ও দেখতে হল)। মুখটা বাচ্চাদের মতন করছো কেন? ভাবছ ক্ষমা করে দেবো? আমি বুঝে গেছি। (লে, পাগলা, কি করলাম?)। তাই ভাবি এত ওয়াক ওয়াক কেন? থু থু, ছিঃ ছিঃ ছিঃ ছিঃ ছিঃ ছিঃ (বিশ্বাস করো ঘুম পেয়েছে)। নিতম্ব উজাড় করে নেত্ত করো, আর শনি, রবি হলেই ঘুম থেকে উঠেই বাড়ি থেকে দৌড়াও। এখন তো এটাই তোমার কাজ। (ওয়াকেরও যে সাইড এফেক্ট আছে, সত্যি জানতাম না)
স্বত্ব © বংব্লগার আপনার যদি মনে হয় বা ইচ্ছা হয় তাহলে আপনি এই লেখাটি শেয়ার করতে পারেন কিন্তু দয়াকরে এর লেখকের নাম ইন্দ্রজিৎ দাস উল্লেখ করতে ভুলবেন না। ভুলে যাবেননা চৌর্যবৃত্তি মহাদায়, যদি পড়েন ধরা।
যদি আপনি আপনার নিজের ছবি এখানে দেখতে পান এবং তাতে যদি আপনার কোন রকম আপত্তি থাকে তাহলে অবশ্যই ই-মেল করে আপনি উপযুক্ত প্রমাণসহ আপনার দাবি জানাতে পারেন।দাবিটি ন্যায্য প্রমাণিত হলে, সে ক্ষেত্রে ছবিটি সরিয়ে ফেলা হবে।