“অমরনাথ যাত্রা” আর আমি!!! অনেকটা “বুক ভরা চুল দিলি আর মাথা জোরা টাক দিলি” টাইপের। অমরনাথটা কপালে ছিল তাই হয়েগেছে। আমি বিগত কয়েক বছর ধরে ট্রেকিং করছি, যার ফলে অমরনাথ যাত্রা টাও ঐ চিন্তাভাবনা নিয়েই গেছিলাম। আমি তো পেশাদার ট্র্যাভেলার নই, তবুও বহু জায়গায় ঘোরার সৌভাগ্য হয়েছে। অনেক জায়গায় ঘুরলেও, এই ট্যুরটার স্মৃতি আমার জীবনে অন্যতম সেরা স্মৃতি হয়ে আজীবন থেকে যাবে। শুরুর দিকটা খুব এলোমেলো ছিল। মানে যাওয়া হবে, কি হবে না, এই যাচ্ছি, তো ঐ যাচ্ছি না। প্রথমেই একটু বলি, ফিটনেস-সার্টিফিকেট এর আবেদন বাতিল হওয়াতে মনটা বেশ খারাপ হয়ে গেলেও আমি কিন্তু হাল ছাড়িনি। যাওয়ার দু’দিন আগে পরলাম জ্বরে।
শুরুটা একটু বলা যাক, প্রতিদিনের মতো আমি সেদিনও মাঠে গেছিলাম দৌড়াতে। হঠাৎ, মধু এসে আমাকে অমরনাথ যাত্রার কথা বলে। আসলে, ওর সাথে ভাস্করের যাওয়ার কথা ছিল, কিন্তু কিছু ব্যাক্তিগত কাজের জন্য এবার ওর সাথে যেতে পারবেনা। তাই, ওর একজন সঙ্গী লাগবে, তাই ওর আমাকে এই প্রস্তাব।সেই সময় আমি মধু কে চিনতামও খুব কম, তাছাড়া আমার মত নাস্তিকের ধর্মস্থান ভ্রমণ ঠিক মানায় না তাই ওকে সরাসরি নাই করে দিলাম। আর ওই সময় আমার অমরনাথ যাত্রা সম্পর্কে যা জ্ঞান ছিল তাতে মনে হয়েছিল যে, এই যাত্রা টা শুধুমাত্র ধর্মীয় যাত্রা। হয়তো সেই সময় আমার এই ধারনাটা ভুল ছিল। আসলে আমার এইটুকু জানা ছিল যে, এটা মাত্র তিনদিনের ট্রেক রুট, আর তাই সেই সময় এত কম দিনের ট্রেক করার আমার কোন ইচ্ছে ছিলনা। আমার তখন মাথায় ছিল বেশ বড় একটা ট্রেক করব। অবশেষে মধু আমাকে মানিয়েই নিল, আর আমরা যাত্রার প্রস্তুতি শুরু করলাম ফেব্রুয়ারির মাঝামাঝি থেকে। আমি যাবো শুনে, যারা আমাকে চিনত, তারা বলা শুরু করল, আমার অমরনাথ যাত্রার সম্মতি প্রমাণ করে যে, আমার মধ্যে নাকি একটা সুপ্ত ধর্মীয় চরিত্র লুকিয়ে আছে। তারা কি ভেবে এই কথা গুলো বলছিল জানিনা, কারণ তারা খুব ভাল করে আমায় চেনে একজন অধার্মিক মানুষ হিসেবেই। কিন্তু এটার মানে এই নয় যে, আমি আমার ধর্ম কে ঘৃণা বা কোনরকম ভাবে অশ্রদ্ধা করি। শুধু এইটুকু বলতে পারি পৃথিবীতে যতগুলো ধর্মের অস্তিত্ব আছে আমি তাদের সবকটাকেই সম্মান করি। এখন, আমি তাদেরকে বলতে চাই, আমি কিন্তু একেবারেই ধার্মিক হয়ে উঠিনি যাত্রার শেষে। হ্যাঁ, এটাও সত্যি, জীবন কে দেখার দৃষ্টিভঙ্গির খানিক পরিবর্তন হয়েছে। কারণ, আমি যাত্রার সময় বিশ্বাসের এক নতুন সংজ্ঞার সন্ধান পেয়েছি, এবং নতুনভাবে আবিষ্কার করেছি, বিশ্বাস এবং সত্যের সংজ্ঞা।
আবার ফিরে আসা যাক আমার অমরনাথ যাত্রার অভিজ্ঞতা নিয়ে, কিন্তু সেটা বলার আগে অমরনাথ মন্দিরের ইতিহাস আপনাদের সঙ্গে একটু ভাগ করে নিতে চাই। সত্যি বলতে অমরনাথ মন্দিরের ইতিহাস বর্ণনা না করলে নিজেকেও খানিকটা অসম্পূর্ণ লাগে। হ্যাঁ, আমার এই অসম্পূর্ণতাটা অনেকের বিরক্তির কারণও হয়ে দাড়াতে পারে, কথা দিলাম খুব অল্প ইতিহাসই বলব, ঠিক যতটা না বললেই নয়।
অমরনাথের গুহা – অমরনাথ হিন্দুদের এক অতি পবিত্র ধর্মীয়স্থান । পাথরের ভাঁজ থেকে চুয়ে চুয়ে পরা জল বরফ হয়ে প্রাকৃতিক ভাবে এক ঐশ্বরিক শিবলিঙ্গের জন্ম দেয়। প্রতিবছর এই শিবলিঙ্গের জন্ম হয় এবং এটি হিন্দু ধর্মের একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ জায়গা। মে থেকে অগাস্ট মাসের মধ্যে পাথর থেকে জল আস্তে আস্তে চুইয়ে চুইয়ে পরতে থাকে আর সেটি জমে যাবার পর শিবলিঙ্গের রূপ নেয়। এই গুহার আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ দিকও আছে, ভগবান শিব এখানেই জীবনের সত্য উন্মচন করেন, ও অমরত্বের সন্ধান পান যা তিনি তাঁর ঐশ্বরিক সঙ্গিনী দক্ষিয়ানি (যিনি পরবর্তী কালে পার্বতী বা মা দুর্গা নামে পরিচিত) সতীকে বর্ণনা করেন। অমরনাথ একান্ন শক্তিপীঠের অন্যতম, তাই হিন্দুধর্মে এর গুরুত্ব অপরিসীম।
পৌরাণিক দিক – কথিত আছে, জীবনের সত্য ও অমরত্বের উন্মোচন করতে দেবাদিদেব শিব অমরনাথের গুহা কে বেছে নিয়েছিলেন। তিনি দেবী পার্বতীকে নিজের সঙ্গিনী হিসেবে বেছে নেন। তিনি যখন গুহায় গিয়েছিলেন, তিনি পহল্গাম, চন্দনওয়ারির রাস্তা দিয়ে গিয়েছিলেন। যাত্রাকালে মহাদেব এক এক করে তাঁর সমস্তটাই ত্যাগ করেছিলেন। সর্বপ্রথমে তাঁর বাহন নন্দী কে পহল্গামে ত্যাগ করেন, এরপর ত্যাগ করেন তাঁর শিরে পরিধেয় অর্ধচন্দ্রটি কে। শেষনাগে পৌঁছে তিনি ত্যাগ করেন তাঁর শ্রেষ্ঠ অলঙ্কার ও প্রিয়সঙ্গী বাসুকিকে। যদি কেউ পুন্যগুহার উল্টোদিকের পর্বতশিখরটি খেয়াল করেন দেখবেন সেটি অবিকল সাপের ফণার আঁকারের। এখনও বহু মানুষ বিশ্বাস করেন, বাসুকি এখনও সেখানেই দাঁড়িয়ে আছেন। যখন তিনি মহাগুনা (মহা গনেশ পর্বত) শিখরে পৌঁছান, তখন তিনি তাঁর পুত্র গনেশ কে ত্যাগ করেন। পঞ্চতরণী পৌঁছে ত্যাগ করেন পৃথিবী, বায়ু, অগ্নি, জল, আকাশ, যা মহান আত্মাহুতির প্রতীক।
অমরনাথ গুহার আবিষ্কার – বিশ্বাস করা হয় যে, প্রাচীনকালে কাশ্মীর উপত্যকা ছিল জলের তলায়। কাশ্যপমুনি সেই জল নানান নদীর ধারার জন্ম দিয়ে নিষ্কাশিত করেন। যখন সম্পূর্ণ জল কাশ্মীর উপত্যকা থেকে সরে যায় তখন, ঋষি ভৃগু, প্রথম মানুষ যিনি অমরনাথ গুহায় বাবার দর্শন করেন। হিন্দুপুরাণ অনুযায়ী এটি ছিল অমরনাথ গুহার আবিষ্কারের কারণ। সাধারণ মানুষের মুখে এই গুহার আবিষ্কার নিয়ে আরেকটি কথার প্রচলন আছে, পঞ্চদশ শতাব্দীতে, এক মেষপালক (গুজ্জ্যার বুটা মালিক) এই গুহাটি আবিষ্কার করেন।
আমার অমরনাথ যাত্রা ২০১৬ -এর পাতা থেকে
ভূমিকা – ২৩শে জুন আমি জ্বরে পরলাম, এত জ্বর যে আমি নিজে থেকেই যাবনা বলে ঠিক করলাম, আমার এই যাওয়া নিয়ে বাড়িতে একপ্রস্থ নাটক হল। অবশেষে আমার স্ত্রী আমাকে ঠিক রাজি করে ফেলল যাবার জন্য। প্রথমেই অসংখ্য ধন্যবাদ আমার স্ত্রীকে, তাঁর চেষ্টা আর অনুপ্রেরণা ছাড়া আমার পক্ষে এই যাত্রাটি সম্ভব হতনা। যাবার একদিন আগে টিভির খবর থেকে জানতে পারলাম ভারতীয় সেনা এবং আতঙ্কবাদীদের মধ্যে বেশ গুলিবর্ষণ হয়েছে, এই শুনে আমার গোটা পরিবার খুব চিন্তাগ্রস্ত হয়ে পরল। এইরকম পরিবেশ থাকা সত্ত্বেও ২৫শে জুন ২০১৬, আমরা অমরনাথের উদ্দ্যেশ্যে রওনা দিলাম কলকাতা থেকে। খুব স্বাভাবিক ভাবেই আমার সফরসঙ্গী মধু।আমাদের মধ্যে আগেথেকেই ঠিক করা ছিল অমরনাথ যাত্রার পর আমরা দুজন আলাদা আলাদা ভাবে ট্র্যাভেল করব। মধু চারধাম যাত্রা করবে আর আমি আমার প্ল্যান অনুযায়ী ট্র্যাভেল করব। মধু হল অত্যন্ত ধর্মভীরু মানুষ আর আমি তাঁর ঠিক উল্টো। এত অমিল থাকা সত্ত্বেও আমাদের মধ্যে একটি অদ্ভুত রসায়নের জন্ম নিয়েছিল। ওর নানান কীর্তিকলাপ আমাকে বেশ আনন্দ দিয়েছে। আর এটাও খুব সত্যি যে, পুরো যাত্রায় ও আমাকে অসম্ভভ সাহায্য করেছে। যদি ও আমার সঙ্গে না থাকত, তাহলে অমরনাথ যাত্রার নির্দিষ্ট দিনের আগে অমরনাথ যাত্রা করা আমার পক্ষে সম্ভব ছিলনা। সে যাইহোক, ২৭শে জুন প্রায় সন্ধ্যে হবে এমন সময় আমরা জম্মু গিয়ে পৌঁছলাম। ট্রেনটি প্রায় তিনঘণ্টা দেরিতে ঢুকেছিল। সেইদিনটা স্টেশনের পাশেই বৈষ্ণবধামের ডরমেটরিতে কাটিয়ে দিলাম। সন্ধ্যেবেলা মধু লাঙ্গারের কিছু কাগজপত্র নিয়ে বসল, যে লাঙ্গারের সঙ্গে ও সম্পর্কযুক্ত। আমিও যতটা পারলাম ওকে কাজে সাহায্য করলাম। সেই রাতে আমি ঘুমতে পারলামনা ওর কিছু অদ্ভুত কাজকর্মের জন্য। এখন অবশ্য বুঝি ওটা খুব একটা অদ্ভুত ছিলনা, হঠাৎ করে সেই রাতে ও হনুমানচালিসা পড়তে শুরু করল, শুধু কি তাই!!! ওঁ নম শিবায়, জয় ভোলে কি, ব্যোম ব্যোম ভোলে আরও কত কিছু সব। সেদিন ওই ডরমেটরিতে যারা যারা ছিল তারাও দেখি ওই মধুর মতই শুরু করল। মনে মনে বললাম, ঘাটের মড়ারা আমায় শুতে দে। পাগল হয়েগেছিলাম সেই রাতে, কিন্তু একটাও রা কাটিনি মুখ দিয়ে।
প্রথম দিন – ২৮শে জুন ২০১৬
ঠিক জানা নেই কাশ্মীরে কাক ডাকে কিনা…তবুও কাকডাকা ভোরে এক কাপ গরম চা খেয়ে বেড়িয়ে পরলাম। জম্মু স্টেশন থেকে ৫/৬ কিমি দূরে জম্মু বাস স্ট্যান্ডে পৌঁছলাম। সেখান থেকে গাড়ি ভাড়া করে রওনা দিলাম পহেলগাঁও এর উদ্দ্যেশে।দুপুর একটা নাগাদ গাড়ির ড্রাইভার পাহাড়ের কোন এক অজানা জায়গায় গাড়ি থামাল দুপুরের খাবারের জন্য। মধু খাবেনা বলে বেঁকে বসলো, কারণ হিসেবে বলল হোটেলের সব কর্মচারী ও রাধুনিরা মুসলিম। ওর যুক্তি অনুযায়ী অমরনাথ যাত্রার আগে এমন কিছু ও করবেনা যেটা হিন্দু ধর্মের ………। এরকম নানান যুক্তি যেগুলো আমার কাছে মূল্যহীন, তাই খাঁড়া করল।ওর এই জ্ঞান ও যুক্তি কোনটাই আমার হজম হলনা উল্টে খানিকটা খারাপই লাগলো। আসলে আমাদের দুজনেরই খিদে পেয়েছিল, আর আমি নিজেকে যতদূর চিনি, যেকোনো পরিস্থিতিতেই আমি ট্র্যাভেল করতে পারি, কিন্তু ও পারেনা। আমি অনেক চেষ্টা করলাম বোঝাবার যাতে ওখানেই খেয়ে নেয়, কিন্তু কিছুতেই ও শুনলনা উপরন্তু আরেকটি যুক্তি খাঁড়া করল আমি গরুর মাংস খাই মুসলমানের মত, মানে ওর ভাষায় ‘গরুখেকো’ তাই আমার পক্ষে ওর অনুভুতি বোঝা অসম্ভব। অগত্যা কোন উপায় না দেখে গাড়ির ড্রাইভার কে গিয়ে আমি অনুরোধ করলাম যে কোন একটি ‘ঠিকঠাক’ বা অরিজিনাল আদর্শ হিন্দু হোটেলে গাড়ি দাড় করাতে। শুনে সে মুচকি হাসল। শেষ বিকেলে গিয়ে পৌঁছলাম পহেলগাঁওতে। এখানে বলে রাখা ভাল পহেলগাঁও কিন্তু মেষপালকদের গ্রাম এবং অমরনাথ যাত্রার বেসক্যাম্পও বটে। আবার ওখান থেকে গাড়ি ধরলাম, উদ্দ্যেশ্য চন্দনওয়ারি। খানিক রাত হল পৌঁছতে।
খানিকটা দূর হাঁটার পর আমরা আমাদের গন্তব্য আমাদের লাঙ্গার বা ভান্ডারায় গিয়ে পৌঁছলাম। ওখানে সবাই আমাদের খুব উষ্ণ অভ্যর্থনা জানাল। সেখানে সবাই আমাদের বিশেষত আমার অচেনা হলেও তারা আমাদেরকে দেখেই অত্যন্ত খুশি হল, এখানেই আমার সঙ্গে প্রথম কমলনাথ জি, অশোকজি এবং প্রধান জির সঙ্গে পরিচয় হল। কিছুক্ষন তাদের সঙ্গে কথা বলার পর সহজ হয়ে গেলাম। আসলে যে জায়গাটি তে আমরা গিয়ে পৌঁছলাম সেটি লাঙ্গারের গুদামঘর। অর্থাৎ সেই সংস্থার লাঙ্গার ততদিনে শেষনাগে তৈরি হয়ে গেছে। তাই আমাদের দুজনকেই শেষনাগ পৌঁছতে হবে এবং তীর্থযাত্রীদের সেবা বা লাঙ্গারের অন্যান্য কাজ করতে হবে। সেদিন রাতেই জানা গেল আমাদের লাঙ্গারের পরিচয়পত্রে কিছু সমস্যা রয়েছে এবং তারজন্য তারপরদিন সকালবেলা আমাদেরকে শ্রীনগরের অমরনাথজি স্রাইনবোর্ডে যেতে হবে। সেইরাত টা বেশ নিশ্চিন্তে ঘুমিয়েছিলাম কিন্তু খানিকটা ‘জয় ভোলে আর হনুমানচালিসা’ শোনার পর।
দ্বিতীয় দিন – ২৯শে জুন ২০১৬
বেশ ভোরে আমার ঘুম ভাঙল সেদিন, দেখলাম সবাই ঘুমিয়ে তখনও। জুতো পরলাম আর বেরিয়ে পরলাম হাঁটতে। ওই ভোরে কাশ্মীরের প্রকৃতি যেন অপরূপা, বুঝলাম সত্যি কাশ্মীর পৃথিবীর স্বর্গ। ক্যাম্পে ফিরে দেখলাম সবাই জেগে গেছে ততক্ষণে। এককাপ চায়ের সঙ্গে সকালের খাবারটা সেরে নিলাম। ভানডারার কাজের সুবিধার জন্য তাদের নিজস্ব একটি গাড়ি আছে এবং সেই গাড়িটি বাইরে আমাদের জন্য অপেক্ষা করছিল, আগেই বলেছিলাম আমাদের স্রাইনবোর্ডে কাজে যেতে হবে তাই আমি, মধু, অশোক জি এবং পণ্ডিত জি বেরিয়ে পরলাম শ্রীনগরের উদ্দ্যেশে। ১১ টা নাগাদ গিয়ে পৌঁছলাম শ্রীনগরে আর কাজ শেষ হল প্রায় ৩ টে নাগাদ। গতরাতে আমি পণ্ডিত জিকে আমার ট্র্যাভেল প্ল্যান টা বলেছিলাম তাই উনি জানেন আমার লিস্টে অবন্তিপুরা আছে, উনি ঠিক করলেন আমরা চন্দনওয়ারি পৌঁছব অবন্তিপুরা হয়ে। হঠাৎ এই কথাটা শোনার পর আমি বেশ খুশি হয়ে গেলাম, যাইহোক অবন্তিপুরার মন্দির দেখে আমার মন ভোরে গেছিল। অবশ্য আমাকে আরও একবার অবন্তিপুরায় আসতে হয়েছিল, কিন্তু সে গল্প আরেকদিন বলা যাবে।
তৃতীয় দিন – ৩০শে জুন ২০১৬
খুব স্বাভাবিক নিয়মেই খুব ভোরেই আমি উঠেগেছিলাম সেদিন। সকালে সামান্য কিছু খেয়ে অবশেষে আমরা হোলি কেভ বা পুন্যগুহার দিকে যাত্রা শুরু করলাম চন্দনওয়ারি থেকে, তখন প্রায় সকাল সাতটা। একটু বলেনি , এটা কিন্তু মধুর পঞ্চমযাত্রা অমরনাথের উদ্দ্যেশে, আর আমার প্রথম যাত্রা। প্রথম দিকটায় ও একটু ঘাগু ট্রেকারের মত কেত নিচ্ছিল, কিন্তু আমি আমার ধৈর্যটা ধরে রাখছিলাম, কারণ আমি সবসময় ট্রেকিং -এর কৌশলগত দিকগুলো মাথায় রেখে ট্রেক করি আর কখনই হাঁটার সময় লোক দেখানো কায়দা করিনা। সবসময় মাথায় রাখি, হেঁটে প্রথমে গেলেই তার জন্য না কোন পুরস্কার পাব, না আমার কোন অফিসের তারা আছে, তাই আমি কখনো তাড়াহুড়ো করিনা। পিসটপের রাস্তা টা সামান্য খাঁড়াই, এবং এখানে শুধুমাত্র ওপরেই উঠতে থাকতে হবে, তাই সাধারণের জন্য এটা একটু কঠিন হতে পারে কিন্তু যারা ট্রেকিং করে তাদের জন্য খুব কঠিন হবেনা। তবে এটাও ঠিক যদি কেউ একটি গড়গতি তে ও আস্তে আস্তে হাঁটে তাহলে এই রাস্তাও সহজ হয়ে যাবে। হঠাৎ করে মধু সর্টকার্ট দিয়ে ওপরে উঠতে গিয়ে ডানহাতের কব্জিতে পেলো ব্যাথা। এরপর আর কিছু হোক না হোক মধু লাইনে চলে এলো। পিসুটপ্ অব্দি ভারতীয় সেনাবাহিনী কে দেখলাম বেশ সজাগ। অবশ্য অমরনাথের পুরো রাস্তাটাতেই সেনাবাহিনী সজাগ ছিল। কখনো কখনো হঠাৎ করেই মালবহনকারী খচ্চরের দল বেশ বিপদে ফেলছিল হাঁটতে, শুধু কি তাই!! সারা রাস্তায় ছড়িয়ে থাকা ওদের গোবরও বিপদে ফেলছিল হাঁটতে। দু’ঘণ্টা হাঁটার পর অবশেষে আমরা গিয়ে পৌঁছলাম পিসুটপে। পিসুটপের নৈস্বর্গিক দৃশ্য দেখে পথে হাঁটার অসম্ভব কষ্টটাই গেলাম ভুলে, সত্যি বলতে, নিজের চোখে না দেখলে প্রকৃতি কত সুন্দর হতে পারে তা লিখে বোঝানো বড্ড কঠিন। পায়ের নিচে সবুজ আর বরফে ঢাকা পর্বতের চূড়া আমার চোখকে বেশ খানিকক্ষণ ব্যাস্ত রাখল, অবশেষে কিছুটা সময় জিরিয়ে নিয়ে পিসুটপকে বিদায় জানিয়ে হাঁটা শুরু করলাম শেষনাগের উদ্দ্যেশে।
প্রায় দুটো, গিয়ে পৌঁছলাম শেষনাগে। শেষনাগের নিল সরোবর দেখে এত অভিভূত হলাম যে লোভ না সামলাতে পেরে খানিকটা নিচে নেমে সরোবরের ধারে গিয়ে বসলাম। হাতের মুঠোয় নিল সরোবর আর সামনে বরফে ঢাকা পাহাড় চুড়াগুলো কিছুক্ষনের মধ্যেই আমার সমস্ত ক্লান্তি দুর করে দিল। ওখানে খানিকক্ষণ বসে থাকার ফলে, শরীরটা এতটাই শিথিল হয়ে গেল যে, উঠে আবার হাঁটতে শুরু করাটা বেশ কঠিন লাগল। কোন উপায়ও ছিলনা কারণ ওখান থেকে আমরা যে লাঙ্গারে যাবো তার দুরত্ত্ব প্রায় ১ কিমি,তাই আরও ১ কিমি হাঁটতেই হবে। বেশ কিছুটা হাঁটার পর অবশেষে গিয়ে পৌঁছলাম লাঙ্গারে। সবাই যথারীতি আমাদেরকে খুব উষ্ণ অভ্যর্থনা জানাল। এখানেই আমার সঙ্গে প্রথম দেখা হল গোর্খা জির। চা বিস্কিট খাওয়ার পরে ওদের সঙ্গে গল্প জমে গেল। কিন্তু গোর্খা জি বারবার বলতে শুরু করলেন দুপুরের খাবারটা সেরে নিতে। অগত্যা তাড়াহুড়ো করে পরিষ্কার হয়ে নিয়ে দুপুরের খাওয়া সারলাম। কিছুক্ষন পর হাঁতে ক্যামেরা নিয়ে বেরিয়ে পরলাম। আসলে নেচার ফটোগ্রাফি করার লোভেই আমার এই বেরিয়ে পরা। এই যাত্রার ঠিক আগেই এটা নিয়ে মধুর কাছে অনেক কথা শুনেছি, যেমন, খুব কঠিন রাস্তা, যখন তখন বৃষ্টি শুরু হয়ে যেতে পারে, আর অধিকাংশ রাস্তাই খুব ভারি বরফে ঢাকা থাকবে এবং Acute Mountain Sickness ও হতে পারে। ওই তালিকায় আরও অনেক গল্প ছিল যা সাধারণ মানুষকে ভয় পাইয়ে দেয়ার জন্য যথেষ্ট। কিন্তু কোথায় বরফ, কোথায় কম অক্সিজেন এর চাপ আর কোথায়বা ভয়ঙ্কর রাস্তা!!!! এটা শুনেই মধু একটু বিষণ্ণ গলায় বলল “অপেক্ষা করো, সব দেখতে পাবে”, উত্তরে আমিও বললাম “বেশ দেখাই যাবে”… চোখে পরল মধু প্রায় ডজন খানেক ওষুধ খেলো, শরীরের নানান ব্যাথা ও নানা রোগের জন্য। আমাকেও অনুরোধ করল ওষুধ খাবার জন্য যাতে আগে থেকেই অতিরিক্ত সতর্ক হওয়া যায়। আমি তো দিব্য সুস্থ ছিলাম তাই ওকে না করেদিলাম। সেই রাতটা আমরা শেষনাগেই কাটালাম।
চতুর্থ দিন – ১লা জুলাই ২০১৬
এই দিনটাই ছিল আমাদের শেষদিন অমরনাথের গুহায় পৌঁছোবার, তাই সকাল সকাল উঠে পরলাম। সামান্য কিছু খেয়ে সকাল সাতটায় বেরিয়ে পরলাম গুহার উদ্যেশে। পথে সেরকম তীর্থযাত্রী পেলামনা, তার কারণ অবশ্য আপনাদের আগেই বলেছি যে, আমরা তীর্থযাত্রা শুরু হওয়ার ঘোষিত দিনের কিছু আগেই যাত্রা শুরু করেছিলাম। আমি শুনেছিলাম দর্শনের মরশুমে এই রাস্তায় পা ফেলার জায়গা থাকেনা এত ভিড় হয়, এর ফলে তীর্থযাত্রীদের ওই পাহাড়ি পথে হাঁটা সত্যি দুষ্কর হয়ে যায়। এখানেই প্রথম খানিকটা রস্তায় বরফ পেলাম। আমার অবশ্য এর আগে স্নো ট্রেকিঙের অভিজ্ঞতা ছিল, তাই আমার পক্ষে খুব একটা কঠিন হলনা। মহাগুনা টপ্ অব্দি রাস্তাটা বেশ খাঁড়াই ছিল এবং এটা প্রায় চৌদ্দ হাজার ফিট ওপরে অবস্থিত। এটাই হল অমরনাথ যাত্রার পুরো রাস্তার সবথেকে উঁচু জায়গা। আমরা কিছু নামহীন স্রোত, নামহীন কিছু ঝর্না পেরলাম। প্রায় বারোটা বেজে গেল মহাগুনা টপ্ পৌঁছতে। ওখানে কিছুক্ষণ জিরিয়ে নিয়ে বেরিয়ে পরলাম পঞ্চতরণীর উদ্দ্যেশে। চন্দনওয়ারি থেকে মহাগুনা টপ্ অব্দি পুরো রাস্তাটাই ছিল চড়াই। এবার আমাদের উতরাই এর পালা, প্রায় চৌদ্দ হাজার ফিট থেকে নামতে হবে বারো হাজারে, কারণ পঞ্চতরণী বারো হাজার ফিটে অবস্থিত। এখানে একটা কথা বলে নেয়া ভাল সাধারণ মানুষের মধ্যে একটা ভুল ধারনা আছে উতরাই চড়াই এর থেকে সোজা। ধারনাটি ভুল।
বিকেল তিনটের পর ভারতীয় সেনা পঞ্চতরণীর মিলিটারি চেকপোস্ট কাউকে পেরতে দেয়না। তাই আগে থেকেই আমরা ঠিক করেছিলাম যে, যেভাবেই হোক তিনটের আগে আমাদেরকে পঞ্চতরণী পৌঁছতেই হবে। ভাগ্যক্রমে তিনটের অনেক আগেই আমরা পৌঁছে গেছিলাম। হাতে খানিক সময় থাকাতে পঞ্চতরণী ঘুরে দেখতে পেলাম এবং অবশ্যই ছবিও তুললাম। ওখানেই আমি খানিকটা চেষ্টা করলাম মাচোই গ্লেসিয়ার যেটা মাত্র সাত কিমি দূরে এবং কোলাহোই গ্লেসিয়ার যা এগারো কিমি দূরে অবস্থিত তাদের স্থাননির্দেশ করার। কিন্তু কিছুই হাতে এলনা।
পঞ্চতরণী পাঁচটি নদির সঙ্গমস্থলে অবস্থিত। এটা বিশ্বাস করা হয় যে এই পাঁচ নদির উৎস হল শিবের জটা এবং তাই এই জায়গার নাম হয়েছে পঞ্চতরণী। সাধারণত তীর্থযাত্রীরা পঞ্চতরণীতে রাত কাটায় এবং পরদিন সকালে গুহার উদ্দ্যেশে রওনা দেয়। কিন্তু আমাদের অন্য পরিকল্পনা ছিল তাই আমরা সেই দিনই গুহার উদ্দ্যেশে হাঁটা শুরু করেছিলাম। অবশেষে বিকেল সাড়ে পাঁচটা নাগাদ আমরা অমরনাথ গুহার সামনে পৌঁছলাম। সেখানেই একটি তাঁবু ভাড়া নিয়ে রাতটুকু কাটালাম। এখানে তাঁবুর ভাড়া মাথাপিছ ১৫০ টাকা ভাড়া।
পঞ্চম দিন – ২রা জুলাই ২০১৬
অনেক ভোরে ঘুম ভাঙল, তখনও আকাশ কালো। আর মধু গভীর ঘুমে। আকাশ কালো হলে হবে কি, সাদা বরফের চাদরের জন্য চারদিক যেন আলো হয়ে আছে। সকালে তাঁবুর মালিক এক বালতি গরম জল দিয়ে গেল মধুর স্নানের জন্য, তার জন্য দাম অবশ্য নিল ৬০ টি টাকা। ওই বরফজমা ঠাণ্ডায় আমার স্নান করার কোন রুচি, ভালবাসা, ইচ্ছে কোনটাই ছিলনা। মধু অবশ্য আমাকে স্নান করার জন্য খুব জোরাজুরি করল, কারণ দর্শনের আগে স্নান করাটা নাকি খুব জরুরি। ওকে বললাম “গতরাতে ভগবান শিবের সঙ্গে আমার ফোনে কথা হয়েছে এবং শিব আমাকে বলেছেন ততক্ষণ অব্দি স্নান না করতে যতক্ষণ না আমি নিরাপদে হোটেলে পৌঁছই”, আমি তো মজা করছিলাম, কিন্তু হঠাৎ দেখলাম মধু গম্ভীর হয়ে গেল। স্নান করে ফিরে এসে ও আমায় বলল দর্শন শেষ না হবার আগে অব্দি আমি যেন ওকে না ছুঁই এবং ওর থেকে যেন একটু দুরত্ব বজায় রাখি। আমার তো এটা শুনে মনে হল আমার ওপর ফতোয়া জারি হয়েছে। আমার গায়ের নোংরা জামাকাপড় নিয়েও ওর সমস্যা ছিল। আমি বুদ্ধি করে ওটা ম্যানেজ করলাম। যাইহোক আমাদের তাঁবুর গায়ে লাগোয়া দোকান থেকে প্রসাদ কিনলাম যদিও প্রসাদ বিক্রেতা মুসলমান। শুধু কি তাই!!!!! ওখানে যত প্রসাদের দোকান আছে সেখানকার সব দোকানী মুসলমানই। চারদিকে এবং খানিকটা আমার গায়ে গঙ্গাজল ছিটিয়ে মধু পুন্যগুহার উদ্দ্যেশে রওনা দিল।
গুহার সামনে গিয়ে যখন পৌঁছলাম দেখি দর্শন কিছুক্ষনের জন্য বন্ধ আছে, কারণ ভারতীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী শ্রী রাজনাথ সিং সেই সময় দর্শন করছিলেন। ভারতীয় সেনারা সেই সময় গুহার প্রধান প্রবেশদ্বার ঘিরে দাঁড়িয়েছিল। আমরা এবং বাকি সবাই প্রায় দু’ঘণ্টা বাইরে দাঁড়িয়েছিলাম। আমাদের তাঁবু থেকে এক/ দু’কিমি দূরে ছিল প্রবেশদ্বার, তারপরেও ৫০/৬০ টা সিঁড়ি চড়ে পৌঁছতে হবে বরফের লিঙ্গের সামনে। হঠাৎ করে মধুর মধ্যে অদ্ভুত একটা পরিবর্তন দেখলাম, দেখে মনে হল যেন আমি আমার শাশুড়িকে ওর মধ্যে দেখছি। যাইহোক, আমি একা একাই গুহায় গিয়ে পৌঁছেছিলাম শেষপর্যন্ত, এবং প্রথমবার বরফের লিঙ্গ দেখেছিলাম। যে পুরোহিত বরফের লিঙ্গের সামনে দাঁড়িয়েছিলেন তিনি খুব শক্ত করে আমার হাতটা চেপে ধরলেন, এবং বললেন ” ভালো করে দর্শন কর” প্রায় দু থেকে তিন মিনিট আমার হাতটা এত শক্ত করে উনি ধরেছিলেন যে আমি ওখান থেকে সরেও যেতে পারছিলামনা। ওনার এই আচরণে আমি যার-পর-নাই অবাক হয়েছিলাম।
ওখানে প্রায় ঘণ্টাখানেক সময় কাটালাম এবং মানুষের চোখেমুখে অদ্ভুত এক বিশ্বাস লক্ষ্য করলাম। এছাড়াও আরও অনেক কিছুই লক্ষ্য করলাম, যেমন, ডিএসএলআর ক্যামেরা দিয়ে লিঙ্গের ছবি তোলা এবং ছেলে ছোকরাদের লিঙ্গের সঙ্গে সেলফি তুলতেও দেখলাম। (মনে মনে গুনগুণ করলাম “চল বেটা সেলফি লে লে রে/ মাস্তি কি ট্যাঙ্কীমে তানিক ডুবকি লে লে রে” ) ঠিক বুঝে উঠতে পারলামনা এরা কি করে এত অত্যাধুনিক যন্ত্রাংশ নিয়ে দাঁড়িয়েথাকা ভারতীয় সেনাবাহিনীকে বোকা বানাল ( ক্ষমতা ? হুম্ম্ম্ম্ম্ম্…টাকা? হুম্ম্ম্…)। এক কোণে মধুকে আবিষ্কার করলাম, দেখলাম ও বিভিন্ন ধর্মানুষ্ঠানে ব্যাস্ত। ওর সব শেষ হবার পরে আমরা আবার একসাথে হলাম। প্রথমেই ও জানতে চাইল আমার কেমন অভিজ্ঞতা হল। উত্তরে আমি জানালাম “অসাধারণ”। ও পুরোহিতের মত মাথা নাড়তে নাড়তে হাসতে লাগলো। আমার একটু মনটা খারাপই হয়েগেছিল মিলিটারির ব্যবহারে, একটা সামান্য ছোট ক্যামেরা নিয়ে আমাকে ঢুকতে দেয়নি, অথচ কত লোক ডিএসএলআর নিয়ে ঢুকে গেছে। যথেষ্ট বলেছি, এটা নিয়ে আর কিছু বলতে চাইনা।
আমরা তাঁবুতে ফিরে এলাম এবং খানিকক্ষণ বিশ্রাম নিলাম। এবার ওর (মধুর) সময় অভিজ্ঞ মন্তব্য করার। যদিও কোন মন্তব্য করলনা তবে কোন কারণ ছাড়াই ও বেশ বাঁকা হাসি হাসছিল। যাইহোক, আমি উতরাই এর কথা ভেবে একটু শরীরচর্চায় মন দিলাম। দুপুর একটা নাগাদ অবশেষে আমরা বালতালের উদ্দ্যেশে রওনা দিলাম এবং সন্ধ্যে সাড়ে ছ’টা নাগাদ বালতালে (সেকেন্ড মাইল) পৌঁছলাম। আমার জানা ছিলনা যে ওখান থেকেও আরও দু/তিন কিমি হাঁটলে বালতাল বাসস্ট্যান্ড গিয়ে পৌঁছব। এরমধ্যে হঠাৎ করে শুরুহল বৃষ্টি, এবং আমরা একটি লাঙ্গারে গিয়ে আশ্রয় নিলাম। অবশেষে রাত আঁটটা নাগাদ বালতাল বাসস্ট্যান্ড গিয়ে পৌঁছলাম। গিয়ে দেখি গাড়ি বন্ধ, আর আমাদের ঐ দিনই শ্রীনগরে ফিরে আসার পরিকল্পনা ছিল। কোন উপায় নেই, তাই সেই দিনটা থাকতে হবে বালতালে, তাই সেইরাতটা বালতালের এক তাঁবুতে থেকে গেলাম।
কি করবেন আর কি করবেন না
1. শরীরচর্চা করুন বিশেষত দম বাড়াবার ব্যায়াম, অন্তত যাত্রার একমাস আগে থেকে।
2. সঠিক গরম জামাকাপড় নেবেন।
3. বর্ষাতি নেবেন (ওপর এবং নিচের)।
4. সঠিক জুতো নেবেন (ট্রেকিং করার জন্য উপযুক্ত জুতো)
5. হাঁটার জন্য ট্রেকিঙের জন্য ব্যবহৃত স্টিক।
6. একটা সচিত্র পরিচয়পত্র।
7. পরিমানমত ট্রেল মিক্স, চকলেট, ক্যান্ডি এবং জলের বোতল।
8. প্রয়োজনীয় ওষুধ।
9. কোল্ড ক্রিম ও লিপ বাম্।
10. পরিমানমত জল খাবেন হাঁটার সময়। অন্তত দু থেকে চার লিটার জল খান প্রতিদিন, এতে উচ্চতাজনিত অসুস্থতা থেকে মুক্তি পেতে পারেন।
11. চড়াই এর সময় ভিড়ের জন্য পথ আটকে থাকতে পারে তাই সৌজন্য দেখিয়ে অন্যকে পথ ছেড়ে দিন।
দয়া করে অমরনাথ যাত্রার প্রশাসকদের নিয়মাবলি মেনে চলুন।
সম্পূর্ণ তালিকা দেখার জন্য এখানে
1. ট্রেকিঙের সময় জিন্সের প্যান্ট পরবেন না।
2. ট্রেকিঙের আগে ও পরে ধূমপান করবেন না।
3. চটি পরে হাঁটবেন না।
4. প্লাস্টিকের তৈরি প্যাকেট, বোতল যেখানে সেখানে ফেলবেন না।
5. কোনরকম নেশার দ্রব্য বিশেষত গাঁজা ব্যবহার করবেন না।
6. মাথায় রাখবেন হাঁটার সময় তাড়াহুড়ো করবেন না, কারণ আগে গেলে আপনার জন্য কোন পুরস্কার নেই। নিজের শরীরের ওপর অযথা চাপ দেবেন না, এরফলে কিন্তু উচ্চতাজনিত অসুস্থতা হতে পারে।
আমার অমরনাথ যাত্রা ২০১৬ এর সম্পূর্ণ অ্যালবাম দেখুন
বিশেষ কৃতজ্ঞতা স্বীকারঃ– মধুসূদন, অশোক জি এবং প্রধান জি। বাংলা তর্জমা ও টাইপিং এ সাহায্য করার জন্য পঞ্চতপা কে ধন্যবাদ।
যদি আপনি আপনার নিজের ছবি এখানে দেখতে পান এবং তাতে যদি আপনার কোন রকম আপত্তি থাকে তাহলে অবশ্যই ই-মেল করে আপনি উপযুক্ত প্রমাণসহ আপনার দাবি জানাতে পারেন।দাবিটি ন্যায্য প্রমাণিত হলে, সে ক্ষেত্রে ছবিটি সরিয়ে ফেলা হবে।
দারূণ লাগল ভ্রমণ কাহিনি, দারুণ আপনার ব্লগ। শেয়ার করলাম।
দারুন লাগলো । খুব সুন্দর বর্ননা । আমাকে email এ আপনার mob.নাম্বার দিলে ভালো হয়